-
কালো মেঘের ছায়া, অগ্নি স্রোত, আজও খুঁজি সেই উষ্ণতা
কালো মেঘের ছায়া জিন্নাত আরা রোজী ঘুটঘুটে অন্ধকার মেঘে চাঁদ জেগে ওঠে আপন খেয়ালে, আমি নিশীথের সাথে মন করি বেচাকেনা শব্দবিহীন ঘরে। আমি ভুলিতে চেয়েও ভুলিতে পারি না তারে এ কোন তামাশা? পৃথিবীতে যত ঘৃণা আছে একবার যদি আসে আপনি দুয়ারে, জানি না তখন কেমন করে সামলাব তারে। কষ্ট আমারে করেছে কঠিন যৌবনের উদিত অহঙ্কারে ছলনাময় এই গগনের নিচে। পাথরে বেঁধেছি প্রশস্ত বুক হাসিতে আড়াল করেছি জীবনের সব লেনাদেনা। কেবলই অন্ধকারে ছুঁয়ে যাওয়া আপন সীমানা, যদি নষ্ট করে দিতে পারতাম দীর্ঘদিনের জমানো সাদা-কালো কষ্টগুলো আলোর ঝিলিকে ভরে যেত ঘুটঘুটে অন্ধকারে জমে থাকা স্মৃতির আকাশখানা। আরও পড়ুন কবি জিন্নাত আরা…
-
নীলপদ্ম, নতুন সূর্যের ভোর
নীলপদ্ম জিন্নাত আরা রোজী আমি শ্রাবণ হয়ে তোমার কাছে এসেছিলাম একগুচ্ছ কদম খোঁপায় গুঁজে বৃষ্টিতে ভিজব বলে সাদা শাড়ি অঙ্গে জড়িয়ে। কৃষ্ণচূড়ার মতো লাল রঙে আঁকা ছিল আমার অধর চোখে লেপ্টে কাজল এঁকেছিলাম, শুধু তুমি দেখবে বলে, শুধু তুমি। একটু আদর, একটু অভিমানের ছোঁয়া নিতে ভালোবেসে নতুন নামে ডাকবে বলে অপেক্ষায় ছিল এ কাতর হৃদয়, কিন্তু তোমার হৃদয় মন্দিরে ভালোবাসার সঞ্চার হলো না। আমার রূপমাধুরীতে সেই দিন আসমান জমিন জেগে উঠেছিল; কিন্তু তোমার প্রেমময় বক্ষ জাগেনি, কারণ তুমি মুখোশ পরা দেশের মানুষ। তোমাকে না পেলে জীবন্ত লাশ হব না, বরং বৃষ্টিভেজা বেলীফুলের মতো সৌরভ ছড়াব। জলজ্যোৎস্নার ছবি হয়ে আসব ভাঙা…
-
রঙিন খামে চিঠি, তোমার জন্য তারার ফুল, অগ্নি স্রোত
রঙিন খামে চিঠি জিন্নাত আরা রোজী বুকটা দুরু দুরু কাঁপছে,বাইরে চোখ পড়তেইখোলা রাস্তায় জোড়া শালিকমাথার উপর আকাশটাওমেঘে মেঘে ভেসে যাচ্ছে।সকাল থেকেই ভাবনাগুলোকেন যেন এলোমেলো। মনে হয় কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করছি।হঠাৎ বাহির থেকে জোরে আওয়াজ এলো,মনটা কেন যেন আঁতকে উঠলো,এমনটাতো কখনো হয় না।আবার চিৎকার; চিঠি আছে, চিঠি।মা বললো, কার চিঠি?দেখতো মা, কার চিঠি, কে পাঠিয়েছে?হলুদ খাম, বড় বড় অক্ষরে লিখা খামের উপরে,খান বাড়ি, নওয়াগ্রাম নাজিরগঞ্জ, পাবনা। ভয়ে ভয়ে খুব আস্তে আস্তেখামের উপরের অংশটুকু ছিড়লাম।ভিতরে গাঢ় নীল কাগজ;ভাঁজ খুলতেই, ‘প্রিয় রজন শুধু তোমার জন্য।তোমার জন্য একটুকরো রঙিন কাগজ,ভালোবাসা তোমার জন্য।ভালোবাসা নিও, ভালো থেকো। আরও পড়ুন জিন্নাত আরা রোজীর কবিতা- কবির…
-
কবির পাণ্ডুলিপি, এই মাটিই বাঁধে লাশের ঘর
কবির পাণ্ডুলিপি জিন্নাত আরা রোজী কবির কবিতায় ফুটে উঠে বিচিত্র রূপ। কত না ভাষায় ছেঁয়ে যায় তার পাণ্ডুলিপি, নিপুন হাতের লেখাগুলো কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়। অনুভূতির জোয়ারে ভেসে যায় মন নামের এক অদৃশ্য শক্তি; সাগরের ঢেউয়ের মতো খেলে তার শব্দগুচ্ছ কখনো শরতের কাশফুলকে আরাধ্য করে, কখনো হেমন্তের নবান্নের উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে; আবার কখনো বসন্তের বাহারি আয়োজন নিয়ে। ছুটে চলা ট্রেনের মতো থামে না তার কলম, যতই আসুক গ্রীষ্মের ঝড়, অথবা নামুক বর্ষা সে তো নিঃশব্দের দেয়াল ভেঙে তার স্বপ্নের কথা লিখবেই! শীতের বিষণ্ন রোদ, কিম্বা ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশার দর্পনে ঢাকে না তার হৃদয়। কত গল্প, কত কথা, স্মৃতি হয়ে…
-
অতল প্রেম, কবির কথামালা
অতল প্রেম জিন্নাত আরা রোজী তোমাকে প্রেম দেবো আঁচল ভরে,ভালোবাসায় ভরে যাবে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত,জীবনের অলিগলি ছেয়ে যাবে সুখের নীলিমায়।দিগন্ত জোড়া নীলাকাশ চেয়ে রবে অপলক,সোনালী ডানায়, ভর করে রোদ নামবে ঝিকিমিকি।তোমাকে প্রেম দেবো হৃদয় জমিন উজাড় করে;তুমি যদি চাও বৃষ্টি হয়ে ভিজাবো মধ্য দুপুরে।নিয়ে যাবো অতল সাগরে ঢেউ ঠেলে ঠেলে,সাগরে সেচে মুক্তোর মালা পরিয়ে দেবে আমার গলে;তোমাকে প্রেম দেবো যতটুকু চাও তার চেয়ে ঢের বেশি।লজ্জা ঢেকে দুটি হাতে হাত রেখে শপথ নিবো,তোমাকে প্রেম দেবো হৃদয় চুইয়ে,নীলিমার মতো শুভ্র স্নিগ্ধ ভালোবাসায় জড়িয়ে রবো মোরা একসাথে।জীবনের নিশ্চিত প্রহর,তুমি হবে আমার গৃহের শুকতারা,এভাবেই সাজাবো আগামীর স্বপ্ন বাসর, সোনালী নীড়।আমার জীবনের সমস্ত…
-
প্রকৃতির মাঝে সুখ খুঁজি, সাগর কন্যা
প্রকৃতির মাঝে সুখ খুঁজি জিন্নাত আরা রোজী আমি উদাস হয়ে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে দেখি প্রকৃতির রূপরেখা– যেন, এই প্রকৃতির মাঝে সুখের পিদিম জ্বলে, বলাকা মন আমার প্রকৃতি খোঁজে ফিরে তাইতো ওদের সাথে কত কথা বলি– নিভৃত নির্জনে একাকী বসে দেখা। মেঘে ঢাকা একটা দু’টো তারা যদি খসে পড়ে সবুজ সমারোহে আমি মুগ্ধ চোখে চেয়ে দেখবো প্রাণ ভরে, শুধু এদেশকে ভালোবাসার তরে। আনমনে ভাবী দিবানিশি তাইতো একটু একটু করে প্রতিনিয়ত কবিতা লিখি ওদের নিয়ে, শুধু কাগজে কলমে নয় এ বুকের মধ্যখানে অতল গহীনে। বেলা শেষে পাখিরা ফিরে আপন নীড়ে যখন মাগরিবের আযান পড়ে মসজিদে কিচিরমিচিরে মুখরিত করে ছোট্ট নীড় মনের…
-
হেমন্তের বিকেল, সময়ের দাবি, দুখিনী পাখি
হেমন্তের বিকেল জিন্নাত আরা রোজী হেমন্তের পরন্ত বিকেলে আমি পাখনা মিলে উড়ি সোনালী ধানের ক্ষেতে সোনা মাখা আবেশে মিষ্টি আলো এসে পড়ে চোখে মৌ মৌ পাকা ধান ছুঁয়ে। আহা! কি যে শিহরণ জাগে মনেপ্রাণে, আমি অপার বিস্ময়ে চেয়ে দেখি পুরানোকে নতুন ভেবে। মৃদু হিল্লোলে দক্ষিণা বাতাস দোল খায় সোনালী ধানের ক্ষেতে। সোনালী ধানের শীষে বেঁধে রাখি রঙিন শিকল চারিদিকে বিস্তর সবুজ উপরে একফালি সাদা মেঘ, আমি মেঘের খোঁপায় উড়িয়ে দেব সোনলী ধানের ছড়া। স্মৃতির ছায়া পথ ধরে হেঁটে আসা আমাদের সেই গাঁ নওয়াগ্রাম। যেথায় জড়িয়ে আছে শৈশব, কিশোর, যৌবনের হাজারো স্মৃতি! আমি এখানে দেখেছি ছয়টি ঋতুর নানা উৎসব; এখানে…
-
অবহেলার বৃত্তে, শুভঙ্করের ফাঁকি, অলিখিত কবিতা
অবহেলার বৃত্তে জিন্নাত আরা রোজী স্মৃতি বিজড়িত আঙিনায়, মানুষ কেন দুঃখ নিয়ে বাঁচে? কেন বিরহের গান গায়? কেন নতুন নতুন স্বপ্ন দেখে নিজের অজান্তে? শূন্যতা বড্ড ছোঁয়াছে একলা ঘরে অজস্র বিরহেও হাসে; মুঠো ভরে উড়িয়ে দিলেও চৌকাঠ ছুঁয়ে আবার ফিরে আসে। নিদারুণ শোকে হৃদয়ে ধুতরা ফুল ফোটে ফুরিয়ে যাওয়া সময় গুলো অকাতরে হাসে। জীবনের শুরু থেকেই, অবহেলার বৃত্তে শ্লথ পায়ে হাঁটছি, পরিত্রাণের স্বপ্ন দেখতে দেখতে একদিন দুম করে পৃথিবীর দেয়ালে ছবি হবো। এখানে শুধুই শুভঙ্করের ফাঁকি। আরও পড়ুন জিন্নাত আরা রোজীর কবিতা- মেয়ের তকমা কবে আমার হবি দ্বিধা-দ্বন্দ ভুলে শুভঙ্করের ফাঁকি মনকে বলি, ‘তুই কেন এত অভিমানী?’ সহজে…
-
কবে আমার হবি, বর্ষার পরশে দুজন
কবে আমার হবি জিন্নাত আরা রোজী দিন গড়িয়ে মাস গেল, বছর শেষে যুগ পেরুল, আর কিছুদিন পরে হবে অর্ধশতাব্দী; তোর সাথে প্রথম দেখা, প্রথম পরিচয় তোরই আঙিনায়। সেই মুহুর্ত ভুলেই গেছিস বোধহয়! তুই তো আমার প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা… তুই না হয় বেশ কিছু দিন অন্য কারো ছিলি! নিকষ আঁধারের সাথে খেলে খেলে সেই তো এলি আমার দুয়ারে, তুই কবে হবি আমার? তোকে নিয়ে কত্ত ভাবি! তুই আমার অনন্তকালের সাথী. ঝুমঝুম বৃষ্টি মুখরিত সকাল, গোধুলি লগনের পড়ন্ত বিকেল, মায়াবতী সাঁঝের বাতি, মধ্যরাতে কবিতা পড়ার সাথী; তোর জন্য নিতে পারিনি উচ্চশিক্ষা, সব চাওয়া-পাওয়া, আনন্দ দিয়েছি দূরে ঠেলে; তোর জন্য আমি…
-
মেয়ের তকমা, মেঘ বালিকা
মেয়ের তকমা জিন্নাত আরা রোজী আমি মেয়ে বলে কথা…. সব কিছুই ভেবে চিন্তে করতে হবে। পা ফেলতে হবে মেপে মেপে কথা বলতে হবে হিসেব করে, চললে-বললে মেয়েলিপনা না থাকলে সমাজ কি বলবে? মা-বাবার, সম্মান থাকবে তো? পরিবারের অমর্যাদা হবে নাতো? লোকে কি বলবে? হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি না পরলে আমি মেয়ে হবো কেমন করে! নাকছাবি, কানপাশা গলার মালা এ সবই তো মেয়েদের নমুনা সাথে বড় করে ঘোমটাও টেনে নিতে হবে, আমি মেয়ে বলে কথা…. শুধু কি তাই? সাথে আরো কত নিয়ম কানুন আছে রন্ধনশিল্প না জানলে মেয়ে তকমাটা যে বিফলে যাবে মিষ্টি স্বরে কথা না বললে মেয়ে হবো কেমন…