-
পাহাড়ি ললনা, অবাঞ্চিত কবিতা
পাহাড়ি ললনা কে এম আশরাফুল ইসলাম সবুজের মিতালি শাওড়াতলী অদূরেই পাহাড়ের মায়া, নিত্য কলকাকলি উড়ায়ে আঁচল ডেকেছিল প্রশান্তির ছায়া। মায়াময় আঁখি প্রশান্তির পাখি বিস্তার করিয়া ডানা, বাঁধিয়া রাখি পরাণে পশিয়া দিয়েছিল ঠিকানা। জীবনের আশা নিরঙ্কুশ ভরসা প্রত্যয়ের বাতিঘর, তৃষিত ভালোবাসা প্রণয় বাঁধনে কেউ হবে না তো পর! লালমাই পাহাড় আকর্ষণ দুর্নিবার ময়নামতির আঁচল, কোটবাড়ি তার হৃদয়ে ‘BARD’ ঐতিহাসিক কমল, সর্পিল পথ লালমতি কিছমত পার হয়ে সেই প্রাণ, করিয়া শপথ বেলতলী স্কুলে সতীর্থ হৃদয়ের টান, মুক্ত হিয়া ডাকিয়া প্রিয়-প্রিয়া চির রাখি বন্ধন, বিরহিয়া খোঁজে সান্ত্বনা মিলনে প্রস্ফুটিত নয়ন! সেই সাথী দানিয়া প্রীতি আপন পিত্রালয়ে রাখি, দিবস-রাতি রাখিত যতনে প্রণয়ের ময়না পাখি!…
-
দেখে নিও তুমি
দেখে নিও তুমি পূর্ণিমা হক যদি আমাকে দেখতে মন চায় দেখে নিও আকাশের নীলিমায় একঝাঁক বলাকা উড়ছে- সেখানেই রবো আমি। দেখে নিও বিলের মাঝে ফোটা লাল শাপলায় আর পথে-প্রান্তরে ছুঁয়ে যাওয়া সবুজ শস্যের মেলায়। লুকিয়ে রবো আমি প্রতিটি সবুজের গোড়ায় খুঁজে নিও তুমি তা সরায়ে সরায়ে। কখনো বসন্তের দখিনা মলয়ে উড়ে যাওয়া যত ধুলোবালি, কখনো বা স্নিগ্ধ চাঁদনী রাতে আকাশে তারার সারি দেখবে তুমি সেখানেই রয়েছি আমি– অথবা দেখে নিও আমায় আকাশের এক কোণে জমে আছি মেঘ হয়ে নামব বৃষ্টির কণা হয়ে জমিনে– তখন দেখে নিও তুমি দুচোখ ভরে। আরও পড়ুন কবি পূর্ণিমা হকের কবিতা- অষ্টাদশী মন সম্পর্ক ভেতরবাড়ির মাঠ…
-
বোশেখ বন্দনা
বোশেখ বন্দনা তাহমিনা খাতুন চৈত্রের অগ্নিবান হলো সবে শেষ বোশেখ এলো যেন নিবারিতে সব ক্লেশ। চৈত্রের রোদ্দুরে মাঠ-ঘাট চৌচির কোথাও মেলে না দেখা শান্তির নীড়। জনশূন্য ফাঁকা নিস্তব্ধ চারিধার ভুলেছিল প্রাণীকূল শোনাতে কলস্বর। ঘুঘুর ক্লান্ত সুর ভরাত দুপুর মনের তারে বাজাতো শুধু বিষাদের সুর। বন-বনানী হয়েছিল কাতর পিপাসায় চাতকের মতো গুনছিল দিন বোশেখের প্রতীক্ষায়। চৈত্রের ভয়াল তাপে ওষ্ঠাগত সব প্রাণ রুদ্র কালবৈশাখী গাইল যেন নতুন দিনের গান। রুদ্র বোশেখের আজ হলো আগমন নতুন দিনের তরে জানাল আমন্ত্রণ। ঈশানকোণে শুনি মেঘের গুরু গুরু সোনালি দিনের বুঝি হলো আজ শুরু। দুরন্ত দূর্বার ঝড়ের হাওয়ায় পুরনো দিন সে তো উড়ে চলে যায়। উন্মাতাল…
-
রক্তাক্ত স্বাধীনতা
রক্তাক্ত স্বাধীনতা আনিছুর রহমান মিলন ‘৭১-এ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে বাঙালির বিজয়ের স্পৃহা জাগে গিরি, মরু, মাঠ, ঘাট, পথ-প্রান্তর ও নদীর বাঁকে বাঁকে। ৫৬ হাজার বর্গমাইল সমান চওড়া ছিল বঙ্গবন্ধুর বুক আজও তাই লাল সবুজের পতাকার মাঝে ভেসে উঠে প্রিয় সে মুখ। দুইশ বছরের ব্রিটিশ শাসন শেষে ১৯৪০-এ ‘লাহোর প্রস্তাব’ মুসলমান অধ্যুষিত দুটি অঞ্চল হবে দুটি ভাগ। ষড়যন্ত্র ও কূটচালের বীজ হলো বোপন হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান গঠন করল মিটিং হলো গোপন। পূর্ব পাকিস্তানকে নিয়ে খেলা হলো শুরু মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন সকল নাটের গুরু। ১৯৪৮ সালে জিন্নাহ সাহেব চলে এলেন ঢাকা ঘোষণা দিলেন উর্দু হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। ক্ষোভে উত্তাল বীর বাঙালি…
-
আত্মশুদ্ধির মাস
আত্মশুদ্ধির মাস জাহাঙ্গীর পানু স্বাগতম হে মাহে রমাদান। তোমার আগমনে হৃদয় হয় স্পন্দনে উদ্বেলিত। মহান রবের প্রতি চির কৃতজ্ঞতায় হয়েছি মোরা ধন্য। আপন শরীরের অযাচিত আবর্জনা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যাক; আদায় হোক দেহের পরিপূর্ণ যাকাত। মানবতার মুক্তির সনদ কোরআনের আগমনে বেড়েছে তোমার সম্মান; সত্য মিথ্যার পার্থক্য বুঝে আমরা করি মহান স্রষ্টার গুণগান। তোমার মাধ্যমে মহান স্রষ্টা সুযোগ দিয়েছে তাঁর সম্পর্কে জানিবার মানবজাতির সহজে সুযোগ হয়েছে মহান প্রতিপালককে চিনিবার। রহমত, বরকত আর মাগফেরাতের মাস দোযখ হতে মুক্তি যেন অতিরিক্ত বোনাস। ভোররাতে খাদ্য তালিকায় বরকতময় সাহরি, আর সুর্যাস্তের পর দোয়া কবুলের আনন্দময় ইফতারি। মানুষের কল্যাণে রয়েছে নামাজ তারাবিহ, রাতের ইবাদাত যেন…
-
লীলাচোখ, তুমি নেই, ঢেউতলে
লীলাচোখ আদ্যনাথ ঘোষ পাখিভোর আজ লীলাচোখে কুমারীত্ব হারায়। লীলাচোখ দুষ্টুমি জানে, পার ভাঙে, গড়ে পার- জলে জলে জ্বলে উঠে স্রোতস্বিনী নদী। জোছনামুখর গ্রহণে গ্রহণ লাগা কাঁঠালি ভরণথোর, রোদেতে প্লাবন; রোদেতে রোদপোড়া ত্রিবেণী মাতঙ্গিনী সোহাগকলস। তবু তার ভাঙন-গড়ন হয়ে উঠে উৎসব; সৃষ্টিপাগল-জলচোখ- ক্ষরণের দহনজ্বালা জোয়ারের পুণ্যতোয়া নদী। এ কেমন জ্বালায় জ্বলে ওঠো, ওগো মেয়ে দহনে দাহনে পুড়ে সুখ পাও, লীলাচোখ পাড়ায়- উল্লাসে মাতাল চোখ, উৎসব ভোর। সবুজ উৎসব মাতে, নদীর এধার ওধার জলেতে জল চায়; বিনিময়ে হয়ে উঠে উর্বরা জমিন। লীলাচোখ জমিন দেখে; নতুনের সৃষ্টিসুখে, স্বপনের সূর্যসকাল। এ কেমন গান গেয়ে ওঠো, ওগো মেয়ে তোমার সর্বনাশা জলের নেশায় সবুজে ভরে উঠে…
-
একটি তর্জনী আর বজ্রকণ্ঠ
একটি তর্জনী আর বজ্রকণ্ঠ তাহমিনা খাতুন আজ হতে শতবর্ষ আগে জন্ম নিয়েছিল দেবদূত সম এক মানব এক দুখী জনপদে, সে জনপদের নাম বাংলা সহস্র বছরের পরাধীন জাতি। শোষণে, শাসনে তিলে তিলে হয়ে ছিল মৃতপ্রায় দরদী হৃদয় কেঁদে হয়েছিল আকুল, অসহায় জাতির দুর্দশায় তাই কঠিন শপথ নিয়েছিল সহস্র বছরের নিপীড়িত, বঞ্চিত, দুখী জনতার দুঃখ মোচনের। জগৎ দেখল একটি তর্জনী, কি অসীম শক্তিধর একটি ক্ষুদ্র তর্জনী! পৃথিবী শুনল একটি কণ্ঠের বজ্র নির্ঘোষ কি অপরিসীম বলে বলীয়ান! কি তেজদৃপ্ত সেই বজ্রকণ্ঠ! ঈশান কোণে জমে থাকা কালো মেঘ তা থেকে বিচ্ছুরিত হলো বিজলীর ঝলকানি, তীব্র ঝলকানির সে তড়িৎ শিখায় আলোকিত হলো বাংলার জনপদ উজ্জ্বল…
-
কালো মেঘের ছায়া, অগ্নি স্রোত, আজও খুঁজি সেই উষ্ণতা
কালো মেঘের ছায়া জিন্নাত আরা রোজী ঘুটঘুটে অন্ধকার মেঘে চাঁদ জেগে ওঠে আপন খেয়ালে, আমি নিশীথের সাথে মন করি বেচাকেনা শব্দবিহীন ঘরে। আমি ভুলিতে চেয়েও ভুলিতে পারি না তারে এ কোন তামাশা? পৃথিবীতে যত ঘৃণা আছে একবার যদি আসে আপনি দুয়ারে, জানি না তখন কেমন করে সামলাব তারে। কষ্ট আমারে করেছে কঠিন যৌবনের উদিত অহঙ্কারে ছলনাময় এই গগনের নিচে। পাথরে বেঁধেছি প্রশস্ত বুক হাসিতে আড়াল করেছি জীবনের সব লেনাদেনা। কেবলই অন্ধকারে ছুঁয়ে যাওয়া আপন সীমানা, যদি নষ্ট করে দিতে পারতাম দীর্ঘদিনের জমানো সাদা-কালো কষ্টগুলো আলোর ঝিলিকে ভরে যেত ঘুটঘুটে অন্ধকারে জমে থাকা স্মৃতির আকাশখানা। আরও পড়ুন কবি জিন্নাত আরা…
-
ভেঙে পড়া শব্দের রং
ভেঙে পড়া শব্দের রং আবু জাফর খান এই যে আমি বেঁচে আছি অনন্ত জীবন ধরে ঘুরছি অরণ্যের ছায়াপথে উড়তে উড়তে ছুঁয়ে ফেলি আকাশ এবং একদা নিজেই ধূসর নক্ষত্রের পথ ধরে হেঁটে যাই, এই-ই কি জীবনের গল্প? ধুলো ওড়ে ধূলোরা উড়তে উড়তে একটি ঘূর্ণি তৈরি করে সন্ধ্যার শাঁখ বাজে বনের গহ্বরে পায়ের তলায় ঘাসেদের স্নানজল, বাল্মীকির বিমূর্ত সভ্যতা; এইসব শাপ কেন দুহাতে আমার! বনের পথে শালের ধূপ মাহুল লতা জড়ানো সেগুনের শরীর ডালপালা ডুবে গেলে নিঃস্ব হয়ে যায় গাছ: আমি গাছের নিঃস্বতা নিয়ে এত পথ হেঁটেছি… শুধু কথা ও রোদের ঠোঁটে গোপন চুমুর বাসনা জড়িয়ে, অথচ তুমি আদিকালের বিলীন মাঠে পতিত…
-
ফাগুন এসেছে, আমি পথ হারা
ফাগুন এসেছে পথিক জামান এসেছে ফাগুন লেগেছে আগুন শিমুলের ডালে ডালে, দখিনা বাতাস লাগিল আসিয়া রঙিন প্রেমের পালে। এমন হয়নি আগে, কেন যে এমন লাগে, বলিও দখিন হাওয়া, সবই আমার শূন্য লাগে কিছুই হয়নি পাওয়া। ফাগুন দিনের পাখি, আমারে দেয় ফাঁকি, ডাকে কোন সে দূরে, ব্যথার বাঁশি গভীর নিশিতে বাজে করুণ সুরে। এমন মধুর রাতে সঙ্গী নাই যে সাথে গাহিতে আসে না গান, বিরহ ব্যথায় কাঁদিয়া মরি বিষিয়া উঠেছে প্রাণ। আমি তোমাকে চাই কোথায় তোমাকে পাই এই ভাবি মনে মনে, ভাবিতে ভাবিতে তপ্তাশ্রু জমে দুটি আঁখি কোণে। আমি তোমাকে ছাড়া হয়েছি পাগল পারা এমন ফাগুন দিনে, কি করে বল কাটিবে…