রঙিন-ঘুড়ি
গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

রঙিন ঘুড়ি

রঙিন ঘুড়ি

শাহানাজ মিজান

 

কখন থেকে ফোনে রিং হচ্ছে, অথচ ফোনটা কেউ ধরছে না। ছোট বোন শুভ্রা এসে ডাকছে-
_এই ভাইয়া, কি কুম্ভকর্নের মতো ঘুমাচ্ছিস, তোর ফোনে সেই কখন থেকে রিং হচ্ছে, ধরছিস না কেন?
সোহেল একবার শুভ্রার দিকে তাকিয়ে ঘুরে ওপিঠ হয়ে শুয়ে পড়ল। আবার ফোনটা বেজে উঠল।
_এই ভাইয়া দেখ, তিশা আপু ফোন দিয়েছে।
_(হাই তুলতে তুলতে) সকাল সকাল একদম ফাজলামি করবি না বলছি। ফোনটা নিয়ে এখান থেকে যা, আমি আর একটু ঘুমাব।
_বিশ্বাস কর, ফাজলামি করছি না। ভালো করে দেখ, তিশা আপুই ফোন দিয়েছে।
_তিশা আজ দু’মাস ধরে আমার সাথে কথা বলে না। আমি ফোন দিলেও কেটে দেয়, আর তুই—-
_(ফোনটা সোহেলের হাতে গুজে দিয়ে) শোন, তোর সাথে ফাজলামি করার মত সময় আমার নেই। আমার স্কুলে যেতে হবে।
শুভ্রা চলে যেতেই, সোহেল ফোনের দিকে তাকিয়েই চমকে উঠে বিছানায় বসল। এমনিতেই যে রাগী মেয়ে, দু’মাস ধরে কথা বলে না। এতবার ফোন দিয়েছে, নিশ্চয়ই কোন জরুরী ব্যাপার। কি হতে পারে ব্যাপারটা? আবার ফোনটা বেজে উঠলো-
_হ্যালো
_নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছ?
_না, তোমার ফোন পেয়ে উঠে পড়লাম।
_এত ঢং করতে হবে না। আধ ঘণ্টার মধ্যে চলে এস।

আরও পড়ুন গল্প সোনালী

সোহেল বিছানায় বসেই বিড়বিড় করতে লাগলো। হু, মহারানীর হুকুমের গোলাম আমি, এতদিন পরে ফোন দিলো। কোথায় জিজ্ঞেস করবে, আমি কেমন আছি না আছি। তা না, চলে এসো। উনি বললেই আমাকে যেতে হবে নাকি?
_(রেডি হতে হতে) না, যাই, নইলে তো আবার রাগ করলে হয়তো ছয়মাস কথা বলবে না।
ভীষণ খুশি মনে বাইক নিয়ে চলে এলো গুলশান লেকে। এসে দেখে ওদের নির্দিষ্ট বেঞ্চটাতে তিশা বসে আছে। পেছন থেকে একটু ভাব নিয়ে সোহেল বললো-

_কেন ডেকেছো, বলো?
_(কোন ভনিতা না করে পেছন থেকেই) বাড়িতে আমার বিয়ের কথা হচ্ছে।
_তো, আমাকে দাওয়াত করতে এসেছ?
_সোহেল please, be serious. সব বিষয়ে তোমাকে ফাজলামি করতে হবে না? কোন বিষয়ে তুমি সিরিয়াস নও বলেই টুকিটাকি নিয়ে তোমার সাথে আমার লেগে যায়। সামান্য কারণে ঝগড়া বাঁধিয়ে দু’মাস কেটে গেল, বুঝতে পারছো?
_Ok. ok sorry. বলো, কি করতে হবে?
_আমি বলবো মানে! বলবে তো তুমি।
_আমি বলবো? পৃথিবীর কোথাও দেখেছো, নাকি শুনেছো যে কোন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে অন্য কোথাও বিয়ের অনুমতি দিয়েছে?
_আবার শুরু করলে?
_ঠিক আছে আর করবো না, বল….

আরও পড়ুন গল্প পরাজিত নাবিক

_তোমার কথা বাবাকে বলেছি, বাবা তোমাকে দেখতে চেয়েছেন।
_(কলার ঝাকিয়ে ) ঊঁ, আমি যেমন হ্যান্ডসাম, স্মার্ট। তোমার বাবা যে আমাকে পছন্দ করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। তাহলে এক কাজ করি চলো, একেবারে কাজী অফিস হয়েই যাই, কি বলো?
_ঊঁ, শখ কতো;
_কেন বলছি আগে শুনে নাও। দেখ, এই যে তুমি শুধু শুধু ঝগড়া বাঁধিয়ে এতদিন আমার উপর রাগ করে রইলে। আমি ফোন দিই আর তুমি কেটে দাও। আচ্ছা বলতো আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারলে কি করে? সেটা তো প্রেমিক বলেই পেরেছো! যদি স্বামী হতাম তবে তো আমাকে ছেড়ে থাকতে পারতে না।
_ঝগড়া কি আমি একা করেছি নাকি তুমিও করেছো? আর আমি তোমার সাথে কথা বলি নি ঠিকই, কিন্তু প্রতিদিন তো তোমাকে দেখেছি।
_কোথায় দেখেছো?
_কেন, তুমি যে প্রতিদিন আমাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকো, ভেবেছো আমি তোমাকে দেখিনি?
_(চমকে উঠে) সত্যিই তুমি আমাকে দেখতে?
_(হাসতে হাসতে) হুম।
_তুমি কি করে বুঝতে যে আমি এসেছি?
_তোমার বাইকের শব্দ শুনে।
_যা, সব বাইকের তো একই শব্দ।
_উঁ হু, তোমারটা আলাদা।
সোহেল : সত্যি বলছো?
_হুম, সত্যি, আর ও একটা সারপ্রাইজ আছে।
_কি সেটা?
_আমি কাল ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম। আমরা পাঁচজন যে, অস্ট্রেলিয়াতে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেছিলাম, সেটা আমাদের মধ্যে তিনজনেরটা এপ্রুভড হয়েছে।
_(মন খারাপ করে) আমারটা হয়নি, না?
_তোমার, আমার আর মিষ্টিরটা হয়েছে। মহসিন স্যার আমাদের পরে সবকিছুই জানাবেন।
_(খুশিতে চেঁচিয়ে) এই জানো, আমার মনে হচ্ছে, খুশিতে আজ পাগল হয়ে যাবো।
_নো, এখন পাগল হলে চলবে না, এখনো অনেক কাজ বাকী। এখন চলো।

আরও পড়ুন গল্প  তৃতীয় স্বাক্ষী

সোহেল বাইকে বসলো। তিশা বসতে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে রইলো। তা দেখে পরিস্কার সিট রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে সোহেল বললো,

_ও বাইকে বসলে তো ধূলো উড়বে! রিক্সা ডাকবো?
_না; আমি ধূলো ময়লা পছন্দ করি না বলে বাইকের তো ঠিকই যত্ন করেছ, অথচ নিজর চেহারার কি হাল করেছ। আয়নায় নিজেকে দেখনি নিশ্চয়ই।
_তা নয়, উঁ আমি রিক্সাই ডাকি। পথে অনেক ধূলো উড়বে।
_উড়ুক, আজ আমার সব ভালো লাগবে।
সোহেল বাইক থেকে নেমে তিশার কাঁধে হাত রেখে বললো,

_জীবনে কিছু কিছু সময় এমন হয় যে, প্রিয়জনের কাছে চাওয়ার চেয়ে পাওয়া বেশি হয়ে যায়, আর সেই মূহুর্তটা মনের ভিতর সুখের অনুভূতি জাগায় সারাটা জীবন।
বাইকে উঠে ধূলো উড়িয়ে রঙিন ঘুড়ির মতো উড়ে চললো দুজনে।।।।।

 

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

রঙিন ঘুড়ি
Facebook Comments Box

প্রকৌশলী আলতাব হোসেন, সাহিত্য সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সাধারণ সম্পাদক। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!